Saturday, October 18, 2014

উচ্চ রক্তচাপের জন্য ঘরোয়া নিরাময়

                                                              লেখক :  ডঃ টি ভট্টাচার্য
পেঁয়াজের রস এবং শুদ্ধ মধু সমমাত্রায় মিশিয়ে প্রতিদিন ২ চামচ করে দিনে ১ বার করে সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারে খুব ভালো কাজ দেয়।
মন্তব্য ও পরামর্শ: পেঁয়াজের রস রক্তের মধ্যে কোলেস্ট্রোলের মাত্রা কম করে হার্ট অ্যাটাক হতে আমাদের রক্ষা করে। পেঁয়াজ স্নায়ু সংস্থানের (নার্ভাস সিস্টেম) জন্য ভালো একটা টনিক। রক্তকে পরিষ্কার করে, হজমে সাহায্য করে হৃদয়ের কাজ সুচারু রূপে করতে সাহায্য করে। অনিদ্রাও দূর করে। মধু শরীরে শীতলতা আনে এবং রক্তবাহিকা উত্তেজনাকে হ্রাস করে ও তাকে সংকুচিত করে রক্তচাপের সম্ভানাকে কমায়। মধুর ব্যবহারে শরীর সবল ও পুষ্ট হয়। ৫-৭ দিন ব্যবহার করে দেখলেই এর সুফল লক্ষ্য করা যায়। প্রয়োজনে দিন কয়েক চালানো যেতে পারে।

বিবিধ: 
ক) তরমুজের বীচির শাঁস ও সাদা খসখস আলাদা আলাদা বেটে সম মাত্রায় মিশিয়ে রেখে দিন। ১ চামচ বা ৩ গ্রামের ১ মাত্রা সকালেও রাতে জল সহ খালি পেটে খাওয়ার পরামর্শ দেবেন। এতে রক্তচাপ কমে এবং রাতে সুনিদ্রা হয়। মাথার যন্ত্রণাও কমে। তরমুজের বীজের শাঁস নিয়মিত খেলে ক্রমাগত রক্তচাপ কমতে থাকে এবং কোলেস্ট্রোল গলে পাতলা হয়ে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। রক্তবাহী নালী সমূহের কঠোরতাকেও হ্রাস করে এবং তাতে কোষ এলে তাকেও নষ্ট করে। নালীগুলোকে নমনীয় করে তোলে। প্রয়োজনমতো ৩-৪ সপ্তাহ খেতে দিতে হবে।

খ) ৩ গ্রাম (১ চামচ) মেথি (দানা) চূর্ণ সকালেও রাতে মুখে দিয়ে জল খেতে হবে। ১০-১৫ দিন পরপর খেলে উচ্চ রক্তচাপ প্রশমিত হবে। এতে মধুমেহ থাকলেও উপকৃত হবে।
গ) খাওয়ার পর কাঁচা রসুন ১-২ কোয়া খোসা ছুলে কুচি করে জলের সঙ্গে চিবিয়ে খেয়ে অথবা ১-২ টি বীজ বের করা মনাক্কাতে দিয়ে চিবিয়ে খেলেও উচ্চ রক্তচাপ প্রশমিত হয়।
রক্তচাপে রসুন খুবই উপকারী। রসুনের টাটকা কোয়া চিবিয়ে খেলে রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাকে স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে এক কোয়ার রসুন আরও বেশি উপকারী।

কিভাবে রসুন খাবেন
সকালে খালি পেটে রসুনের ২-৩ কোয়া নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। এরপর প্রত্যেক কোয়াকে ৩-৪ টুকরো করে কেটে নিয়ে সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে দিন। অথবা অসুবিধা হলে জল দিয়ে টুকরোগুলো গিলেও নেওয়া যায়। এভাবে রসুনের সেবনে কোলেস্ট্রোল ও রক্তচাপকে কমায় এবং টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা দূর করে।
সহায়ক চিকিৎসা: ক) গম ও ছোলা সম মাত্রায় নিয়ে আটা করতে হবে। ভুষি সমেত এই আটার রুটি রোগীকে খেতে দিন। ১-২ দিনে রোগীর উচ্চ-রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়।
খ) রাতে তামার পাত্রে রাখা জল সকালে নিয়মিত পান করলে উচ্চ রক্তচাপ কমে এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গ) ৪ টি তুলসীপাতা, ২ টি নিমপাতা ২-৪ চামচ জলের সঙ্গে ঘুঁটে সকালে খালি পেটে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে।
ঘ) গাছপাকা পেঁপে সকালে কালি পেটে ১ মাস খেলে উচ্চ রক্তচাপ ভালো হয়।
ঙ) পেঁয়াজ ও রসুন যদি খাওয়ার সময় পরিমাণমতো খাওয়া যায় তাহলে হৃদয় রোগে উপকার পাওয়া যাবে। রোগ নিবারণ হয় এবং রোগের চিকিৎসাতে সহায়ক হয়। পেঁয়াজ ও রসুন নিয়মিত থাকায় রক্তে কোলেস্ট্রোলের মাত্রা বেশি বাড়তে পারে না কারণ এগুলোতে ফিব্রিনোলাইটিক পদার্থহেতু রক্ত বিকার জনিত রক্ত জমাট কম হয় এবং জমা রক্তকে গলিয়ে স্বাভাবিক করতেও সাহায্য করে।
চ) দইয়ের ঘোল নিয়মিত খেলে রক্তের উচ্চ ও নিম্ন এই উভয়বিধ চাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। নিম্ন-রক্তচাপের ক্ষেত্রে ঘোলের মধ্যে ২ গ্রেন হিং মিশিয়ে সেবন করতে দেবেন। দিনের অর্থাৎ দুপুরের খাওয়ার পর ১ গ্লাস ঘোল খাওয়া অত্যন্ত হিতকারক। ঘোলের মতো চৌলাইয়ের (চান্দুলিয়া) শাক বা রসও দু’ধরেনর রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
অপথ্য: ক) দুধ, মাখন ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ভারি খাবার, ভাজা জিনিস, বিড়ি, সিগারেট, মদ, ঘি, লবণ, বেগুন, আলু, আধপাকা কলা, কাঁঠাল, ডাল, ময়দা, মিষ্টি, গুড়, তেল, টক, ঝাল-মশলা, ছাঁটা চালের ভাত, সাদা চিনি, চা, কফি, গরু ও খাসি ইত্যাদির মাংস, মাছ মাদকদ্রব্য ইত্যাদি এই রোগে খাওয়া নিষিদ্ধ।
খ) দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা, দাঁড়িয়ে থাকা, দ্রুত সিঁড়ি ভাঙা, বেশি পরিমাণে ও বারবার খাওয়া, অত্যধিক ক্রোধ, ভয়, আনন্দ, শোক, ব্যাকুলতা, উদ্বেগ, তাড়াহুড়ো, উত্তেজনা ও মানসিক চঞ্চলতা ইত্যাদি সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে এবং দূরে থাকতে হবে।
পথ্য: ক) লেবু, পেঁপে, আমলা, মুসম্বি, আপেল, তরমুজ ইত্যাদি ফল।
খ) চৌলাইয়ের শাক, পালঙ, রসুন, লাউ, চালকুমড়ো, পেঁয়াজ, টম্যাটো, গাজরের স্যালাড, গাজরের রস, বেথোর শাক ইত্যাদি শাক-সব্জি।
গ) সকালে খালি পেটে গমের বাসি রুটি দুধে ভিজিয়ে খাওয়া।
ঘ) দইয়ের মধ্যে গ্লুকোজ দিয়ে খাওয়া।
ঙ) প্রতিটি গ্রাস খুব ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া।
চ) খাওয়ার সময় জল না খাওয়া।
ছ) সকালে খালি পায়ে ৪-৫ কিমি হাঁটা। অথবা ১০-১৫ মিনিট ধরে ঘাসের ওপর হাঁটাচলা করা (শীত ও বর্ষার সময় বাদ দিয়ে)
জ) সর্বদা প্রসন্ন থাকা। প্রতিদিন কিছুক্ষণ ব্যায়াম ও মানসিকভাবে প্রসন্ন থাকা রক্তের কোলেস্ট্রোলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপও ভালো থাকে।
ঝ) সপ্তাহে বা পনেরো দিন অন্তর ১ দিন করে উপবাস থাকা দরকার। যেমন শুক্ল পক্ষের একাদশী। এতে ব্লাড প্রেসার ভালো থাকে।
ঞ) পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে উচ্চ রক্তচাপে উপকার পাওয়া যায়। রুদ্রাক্ষ রক্তবাহিকা স্থূল ও কঠোর হলে তাকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ যেন শরীরকে স্পর্শ করে থাকে।

সূত্র: জিরো২ইনফিনিটি

0 comments:

Post a Comment

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | free samples without surveys